২. ডিউরেনবার্গ ফর্মুলা (Deurenberg Formula) - BMI ভিত্তিক
ডিউরেনবার্গ ফর্মুলা শরীরের চর্বি শতাংশ (Body Fat Percentage) পরিমাপের একটি বহুল ব্যবহৃত এবং সহজ পদ্ধতি। এটি বডি মাস ইনডেক্স (Body Mass Index বা BMI), ব্যক্তির বয়স এবং লিঙ্গ - এই তিনটি প্রধান উপাদানের উপর ভিত্তি করে তৈরি। ডাচ বিজ্ঞানী পিটার ডিউরেনবার্গ এবং তার সহকর্মীরা বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর উপর গবেষণা চালিয়ে এই ফর্মুলাটি উদ্ভাবন করেন। এই ফর্মুলাটি বিভিন্ন লিঙ্গ এবং বয়সের মানুষের শরীরের চর্বি পরিমাপের ক্ষেত্রে একটি সাধারণ ধারণা দিতে সক্ষম। BMI এর উপর ভিত্তি করে তৈরি হওয়ায়, এই ফর্মুলা প্রয়োগ করা তুলনামূলকভাবে সহজ।
শরীরের চর্বি পরিমাপের জন্য অনেক পদ্ধতি প্রচলিত আছে, যেমন - ডেক্সা স্ক্যান (DEXA scan), বড পড (Bod Pod), ত্বকের ভাঁজ পরিমাপ (Skinfold Calipers) ইত্যাদি। কিন্তু এগুলোর জন্য বিশেষ সরঞ্জাম এবং প্রশিক্ষিত ব্যক্তির প্রয়োজন। ডিউরেনবার্গ ফর্মুলা এক্ষেত্রে একটি সহজ বিকল্প, যা কোনো বিশেষ সরঞ্জাম ছাড়াই শুধুমাত্র ওজন, উচ্চতা এবং বয়সের মাধ্যমে শরীরের চর্বির একটি আনুমানিক হিসাব দিতে পারে। এই কারণে, এটি বৃহত্তর পরিসরে বা মাঠ পর্যায়ে দ্রুত মূল্যায়নের জন্য বিশেষভাবে উপযোগী।
ফর্মুলা:
ডিউরেনবার্গ ফর্মুলাটি নিম্নরূপ:
বডি ফ্যাট % = (১.২০ × BMI) + (০.২৩ × বয়স) - (১০.৮ × লিঙ্গ ফ্যাক্টর) - ৫.৪
- পুরুষ: লিঙ্গ ফ্যাক্টর ১
- মহিলা: লিঙ্গ ফ্যাক্টর ০
এই ফর্মুলা অনুযায়ী, BMI এর মান বৃদ্ধি পেলে শরীরের চর্বি শতাংশও বৃদ্ধি পায়। বয়সের সাথে সাথেও চর্বি শতাংশ সামান্য বাড়তে পারে। লিঙ্গের ক্ষেত্রে, সাধারণত পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের শরীরের চর্বি শতাংশ বেশি থাকে, তাই এই পার্থক্য সমন্বয় করার জন্য ‘লিঙ্গ ফ্যাক্টর’ ব্যবহার করা হয়। উল্লেখ্য, এই ফর্মুলাটি মূলত ১৮ বছর বা তার বেশি বয়সীদের জন্য প্রযোজ্য।
BMI কিভাবে হিসাব করা হয়:
BMI হিসাব করার জন্য নিম্নলিখিত সূত্র ব্যবহার করা হয়:
BMI = ওজন (কেজি) / (উচ্চতা (মিটার))২
উচ্চতা সেন্টিমিটারে থাকলে:
BMI = ওজন (কেজি) / (উচ্চতা (সেমি) / ১০০)২
উচ্চতা ইঞ্চিতে থাকলে:
BMI = ওজন (কেজি) / (উচ্চতা (ইঞ্চি) × ০.০২৫৪)২
বিকল্পভাবে, সরাসরি ইঞ্চি এবং পাউন্ড ব্যবহার করেও BMI হিসাব করা যায়:
BMI = (ওজন (পাউন্ড) / (উচ্চতা (ইঞ্চি))২) × ৭০৩
ডিউরেনবার্গ ফর্মুলার সুবিধা:
- সহজ প্রয়োগ: এই ফর্মুলা ব্যবহার করে শরীরের চর্বি শতাংশ হিসাব করা খুবই সহজ, কারণ এতে শুধু ওজন, উচ্চতা, বয়স এবং লিঙ্গ এর তথ্য প্রয়োজন।
- কম খরচ: এই পদ্ধতিতে কোনো বিশেষ যন্ত্রপাতির প্রয়োজন হয় না, তাই এটি কম খরচে ব্যবহার করা যায়।
- মাঠ পর্যায়ে উপযোগী: বড় পরিসরে বা মাঠ পর্যায়ে শরীরের চর্বি পরিমাপের জন্য এই পদ্ধতিটি খুবই উপযোগী।
ডিউরেনবার্গ ফর্মুলার সীমাবদ্ধতা:
- পেশীর ভর বিবেচনা করে না: এই ফর্মুলা পেশীর ভর বিবেচনা করে না। তাই, পেশীবহুল ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে চর্বি শতাংশ বেশি দেখাতে পারে।
- চর্বি বিতরণের ধরন বিবেচনা করে না: এটি শরীরের চর্বি বিতরণের ধরন বিবেচনা করে না। পেটের চর্বি স্বাস্থ্যের জন্য বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হলেও, এই ফর্মুলা তা আলাদা করে পরিমাপ করে না।
- জাতিগত পার্থক্য: বিভিন্ন জাতিগত গোষ্ঠীর জন্য এই ফর্মুলার নির্ভুলতা ভিন্ন হতে পারে।
- আনুমানিক পরিমাপ: ডিউরেনবার্গ ফর্মুলা শরীরের চর্বি শতাংশের একটি আনুমানিক পরিমাপ দেয়, নিখুঁত পরিমাপ নয়।
- বয়স সীমা: এই ফর্মুলাটি মূলত ১৮ বছরের বেশি বয়সীদের জন্য প্রযোজ্য।
স্বাভাবিক শরীরের চর্বি শতাংশ চার্ট
এই চার্টটি বয়স এবং লিঙ্গ অনুসারে শরীরের স্বাভাবিক চর্বি শতাংশের একটি সাধারণ পরিসীমা দেখায়। এই মানগুলি বিভিন্ন উৎস থেকে সংগৃহীত এবং সামান্য ভিন্ন হতে পারে। Deurenberg ফর্মুলা থেকে প্রাপ্ত ফলাফল এই চার্টের সাথে তুলনা করে একটি ধারণা পাওয়া যায়।
বয়স |
পুরুষ |
মহিলা |
খুব কম (%) |
স্বাভাবিক (%) |
উচ্চ (%) |
খুব উচ্চ (%) |
খুব কম (%) |
স্বাভাবিক (%) |
উচ্চ (%) |
খুব উচ্চ (%) |
২০-৩৯ বছর |
<৮% |
৮-২০% |
২১-২৫% |
>২৫% |
<২১% |
২১-৩৩% |
৩৪-৩৮% |
>৩৮% |
৪০-৫৯ বছর |
<১১% |
১১-২২% |
২৩-২৮% |
>২৮% |
<২৩% |
২৩-৩৪% |
৩৫-৪০% |
>৪০% |
৬০+ বছর |
<১৩% |
১৩-২৫% |
২৬-৩০% |
>৩০% |
<২৪% |
২৪-৩৬% |
৩৭-৪২% |
>৪২% |
ডিউরেনবার্গ ফর্মুলাটি একটি প্রাথমিক স্ক্রিনিং এর জন্য অত্যন্ত উপযোগী, তবে আরও সঠিক এবং নিখুঁত পরিমাপের জন্য ডেক্সা স্ক্যান (DEXA scan), বড পড (Bod Pod) বা পানির নিচে ওজন (Hydrostatic Weighing)-এর মতো আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়।